নিউরোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন যে, স্মার্টফোন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্রমাগত ব্যবহার মানুষের মস্তিষ্কের বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষত স্মার্টফোনের আসক্তির কারণে মস্তিষ্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে। নিউরোবিজ্ঞানী ওয়েন্ডি সুজুকি সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
ওয়েন্ডি সুজুকি বলেন, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক রাসায়নিকের অতিরিক্ত নির্গমন ঘটায়, যা আনন্দের অনুভূতির জন্য দায়ী।
তবে এর অতিরিক্ত নির্গমন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে, মস্তিষ্কের নমনীয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মানুষকে আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। এই আসক্তি মস্তিষ্কের বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে সীমিত করে দেয়, যার ফলে মানুষের জীবনে সত্যিকার আনন্দ পাওয়ার সুযোগও কমে যায়।
সুজুকি জানান, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া থেকে পাওয়া স্বাভাবিক আনন্দের বদলে, এখন মানুষ লাইক-কমেন্টসের মাধ্যমে স্বস্তি পেতে শুরু করেছে। এটি শুধু মস্তিষ্কের সুস্থতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং মানসিক চাপও বৃদ্ধি করছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই আসক্তির প্রভাব নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, স্মার্টফোনের ব্যাপক ব্যবহারের প্রভাব আমাদের স্নায়ুপথকে বদলে দিচ্ছে এবং এর ফলে মস্তিষ্কের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোর ডিজাইনই এমন যে, এগুলো ব্যবহারকারীদের আসক্ত করে তোলে।
স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে সুজুকি কিছু পরামর্শও দেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল ডিটক্সের মাধ্যমে স্মার্টফোন ব্যবহারে বিরতি নেয়া উচিত। এতে মানসিক চাপ কমে এবং মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। এছাড়া শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন হাঁটা বা ব্যায়াম, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
সুজুকির মতে, মুখোমুখি সামাজিক মিথস্ক্রিয়া মস্তিষ্কের মূল অঞ্চলকে সক্রিয় করতে পারে যা ডিজিটাল মিথস্ক্রিয়ায় সম্ভব নয়। তিনি সতর্ক করে দেন যে, স্মার্টফোনের অত্যধিক ব্যবহারের কারণে সহানুভূতি, মানসিক বুদ্ধিমত্তা এবং গভীর সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা হারিয়ে যেতে পারে।
স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য সচেতনভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ, ধ্যান এবং মানব সংযোগের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এতে মস্তিষ্কের সুস্থতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।