বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। ১৪ দলের শরিক নেতারা আশা প্রকাশ করেছেন যে সরকার এ বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, “জামায়াত-শিবিরের অপশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য ১৪ দলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১৪ দলের নেতারা মনে করেন, বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির ও তাদের দোসর উগ্রবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব নস্যাত করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, এবং হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
“সম্প্রতি বিভিন্ন গোপন হামলা এবং গুলি বর্ষণের মাধ্যমে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য সরকারের ওপর দায় চাপাতে চেষ্টা করেছে। জাতীয় স্বার্থে এ ধরনের দেশবিরোধী অপশক্তিকে নির্মূল করা প্রয়োজন।”
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবি দীর্ঘদিনের হলেও, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর এ দাবি আরও জোরালো হয়।
তবে গত ১৫ বছরে সরকার কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেয়নি। এবার কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেওয়ার পেছনে বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
তাই বাংলাদেশের সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক ধারাকে রক্ষা করতে হলে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা দরকার। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।”
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “১৪ দল মনে করে, আর দেরি না করে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা উচিত। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান রোধ করা সম্ভব হবে। আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে।”
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া বলেন, “আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত জাতিকে ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণের পথে সহায়তা করবে।”
জামায়াতে ইসলামীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪১ সালের ২৬ অগাস্ট, যখন এর নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধিতা করায় ১৯৬৪ সালে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলেও পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামক বিভিন্ন দল গঠন করে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, এবং লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, তবে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দলটি আবার রাজনীতিতে ফিরে আসে।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসন লাভ করে এবং বিএনপির সঙ্গে সরকার গঠনে সমর্থন দেয়। ২০১৩ সালে হাই কোর্ট দলটির নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে, যা সর্বোচ্চ আদালতেও বহাল থাকে। এরপর থেকে জামায়াত আর কোনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রেক্ষিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তবে দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে, যা এখনও সম্পন্ন হয়নি।