অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনকালে গণতান্ত্রিক অধিকার ও সামাজিক বিভাজনের বিরুদ্ধে তার মতামত তুলে ধরেন।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) পরিদর্শনকালে ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা হলো আমরা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ হিসেবে নয়, বরং মানুষ হিসেবে আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হোক। বর্তমান সমস্যাগুলোর মূল কারণ হলো আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের অবহেলা ও পচন। এ কারণে গোলমাল হচ্ছে।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, “সবার অধিকার সমান। আমাদের অধিকার আদায়ে বিভক্ত হয়ে নয়, আমরা সবাই এক মানুষ, এক অধিকার; এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আপনাদের সাহায্য প্রয়োজন, তবে ধৈর্য ধরুন। আমরা কিছু করতে পারলাম কি না, সেটা পরে বিচার করবেন। যদি না পারি, আমাদের দোষ দেবেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ন্যায় বিচার হলে কোনো সম্প্রদায় বঞ্চিত হবে না। আইন সবার জন্য এক। জাতি, সম্প্রদায়, ধর্ম নির্বিশেষে আইনের অধিকার সবার জন্য সমান। বিভেদের জন্য আমাদের মূল সমস্যার মূলে যেতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা আমাদের বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করবে।”
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ক্ষোভের মধ্যে না গিয়ে একত্রে আসুন। এক আইন এবং আমাদের আইনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিচার পাই না, এটাই মূল বিষয়। প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের পেছনে থাকা পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব কাটিয়ে উঠতে হবে।”
ড. ইউনূস তার গ্রামীণ ব্যাংকের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “আমরা যখন গ্রামীণ ব্যাংকের কাজ শুরু করি, তখন গরিব মেয়েদের সহায়তা করেছি। এতে ধর্মীয় পার্থক্যের কোনো ভূমিকা ছিল না। হিন্দু-মুসলমানের ভিত্তিতে কাজ হয়নি। গরিব মেয়ের জন্য আমাদের লক্ষ্য ছিল। একইভাবে সমাজের সবার জন্য একসাথে কাজ করা উচিত।”
এই বক্তব্যে ড. ইউনূস সামাজিক বিভাজন ও ধর্মীয় পার্থক্যের বিরুদ্ধে এক সুষম ও সংহত সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।