গত দুই দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া অতি ভারি বর্ষণ পরিস্থিতিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে, যার ফলে কয়েক লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
মিরসরাই, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, বোয়ালখালীসহ বেশির ভাগ উপজেলায় পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এই বন্যায় মৎস্য চাষিরা কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, এবং বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, সবজি, এবং রোপা আমন ডুবে গেছে। বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে, এবং বাঁধ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। বন্যার কারণে সাপের উপদ্রব এবং পাহাড় ধসের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় মোট ২৯০টি মেডিকেল টিম মাঠে রয়েছে এবং কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ মিলিমিটার এবং বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা পর্যন্ত ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারি বর্ষণের পাশাপাশি মিরসরাইতে পাহাড়ি ঢলও দেখা দিয়েছে, যার ফলে ৬০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার মৎস্য ঘেরের বাঁধ ভেঙে কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্য চাষিরা।
সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তরাংশের ছয়টি ইউনিয়নও ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে। স্লুইসগেট ভেঙে যাওয়ার ফলে কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। ফটিকছড়ি উপজেলায় শতাধিক গ্রাম পানির নিচে নিমজ্জিত, এবং হালদা নদী ও ধুরুং খালের পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার নিম্নাঞ্চলও কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে, যার ফলে ফেরিঘাটসহ নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো ডুবে গেছে এবং ফেরি পারাপার বন্ধ রয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও লাগাতার বর্ষণের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিভিন্ন খালের বাঁধ ভেঙে ঢলের পানি ঢুকে পড়েছে, যার ফলে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানিয়েছেন, জেলা জুড়ে মোট ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাকিব হাসান জানিয়েছেন, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে সরে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।